দ্বিতীয় পর্ব মিশনারীদের অবদান বা সংগৃহীত সাহিত্য

১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে বাণিজ্য ও সাম্রাজ্য দুই-ই স্থাপন করল। শুরু হয় পরাধীনতার গ্লানি। ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ সরকার ক্যাপ্টেন ক্যামাককে পার্লামেন্টের শাসনকর্তা নিযুক্ত করে পাঠালেন। শুরু হয় অর্থনৈতিক শোষণ। শোষণ ক্রমশ রূপ নেয় ধর্মীয় শোষণ। বাইবেল প্রচারের তাগিদে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় মিশন স্থাপিত হয়। বলা বাহুল্য, পূর্ব ভারতেই প্রথম বাইবেল তথা খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচারের কাজ শুরু হয়। এ কাজ শুরু হয় আদিবাসীদের মধ্যে। বাংলা, বিহার, উরিষ্যার আদিবাসী তথা সাঁওতালদের মধ্যে যারা বাইবেল প্রচারের কাজ শুরু করেন তাঁরা হলেন- (১) আমেরিকান বাপটিস্ট ফরেন মিশন সোসাইটি। (২) চার্চ মিশনারি সোসাইটি। (৩) নর্দান ইভানজেলিক্যাল লুথারন চার্চ। (৪) মেথডিস্ট মিশনারী সোসাইটি। (৫) রমান ক্যাথলিক মিশন। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ থেকেই সাঁওতাল তথা আদিবাসীদের মধ্যে খ্রীষ্টাধর্ম প্রচারের কাজ শুরু করে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, ১৮৩৮ সালে ঊড়িষার জলেশ্বরে আমেরিকান বাপটিস্ট ফরেন মিশন সোসাইটি একটি মিশন স্থাপন করেন। আদিবাসী অঞ্চলে এটিই প্রথম মিশন। মিশনের উদ্দেশ্য একটাই – স্থানীয় আদিবাসীদের মধ্যে বাইবেল প্রচার।

খ্রিস্টধর্ম প্রচারের কাজ শুরু হবার পর থেকেই মিশনারীগন ভাষার অন্তরায় দূর করার জন্য সাঁওতাল ভাষার প্রতি আকৃষ্ট হন। বাইবেল প্রচার তাদের প্রধান উদ্দেশ্য হলেও মিশনারী গন প্রথম অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যে, সাঁওতালি ভাষার মধ্যে বলিষ্ঠ জীবনীশক্তি রয়েছে। ক্রমশ তারা বুঝতে পারলেন, এই ভাষার মৌখিক সাহিত্যের ভান্ডার অফুরন্ত এবং বৈচিত্র্যময়। একটি জাতির মনঃচেতনার পরিচয় এই ভাষার মধ্যে রয়েছে। ফলে অনেক মিশনারী সাঁওতালি ভাষা শিখে এই ভাষার চর্চা ও উন্নয়ন মূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেন। কিছু সংখ্যক সাঁওতালদের নিজস্ব ধর্ম ও সাংস্কৃতির মৌলিকত্ব হারাতে হয়েছে ঠিকই, তবু বলা যায়, সাঁওতালি ভাষা উন্নয়নের ক্ষেত্রে মিশনারী গন আলোক পথের দিশারী। স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সাঁওতালি ভাষা ও সাংস্কৃতির প্রতি বিশেষ ভাবে আকৃষ্ট হয়ে মিশনারী গন বহু প্রাচীন গান, ছড়া ও লোককথা বিরামহীন ভাবে সংগ্রহ করেন ও পুস্তকাকারে প্রকাশ করেন। বলা বাহুল্য, মিশনারী গন প্রথম সাঁওতালি সাহিত্যের লিখিত রূপ প্রদান করেন। সাঁওতালি ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে এ নবতম অধ্যায়ের সূচনা হয়। যে সব বিদেশী মিশনারী নিজস্ব প্রচেষ্টায় রোমান লিপিতে কয়েকটি মূল্যবান সাঁওতালি পুস্তক প্রকাশ করেন ও সাঁওতালি ভাষা চর্চায় আত্মনিয়োগ করে গিয়েছেন।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.